Search This Blog

Tuesday, December 20, 2016

স্ট্রোক ও হৃদরোগের কারণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ যে কোনো সময় মৃত্যুবরণ করতে পারে।

হৃদরোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শরীরের অন্যতম অঙ্গটির নাম হৃৎপিণ্ড। আর স্ট্রোকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শরীরের অঙ্গটির নাম মস্তিষ্ক। একজন সুস্থ মানুষের হৃৎপিণ্ড প্রতি মিনিটে ৭২ থেকে ৮০ বার সংকুচিত ও প্রসারিত হয়, যাকে হৃদস্পন্দন বলা হয়।হৃৎপিণ্ড রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সেল বা কোষে ফুসফুস থেকে গৃহীত অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং সেলে উৎপাদিত কার্বন ডাই-অক্সাইড শরীর থেকে ফুসফুসের মাধ্যমে বের করে দেয়।

 জীবনের জন্য হৃৎপিণ্ড যে প্রকাণ্ড গুরুদায়িত্ব পালন করে, তা অত্যন্ত জটিল ও সূক্ষ্ম। এ প্রকাণ্ড গুরুদায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবনের বিভিন্ন সময় হৃৎপিণ্ডকে বিভিন্ন ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয় এবং সময়মতো হৃৎপিণ্ডের এসব অসুস্থতার প্রতিকার না হলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ যে কোনো সময় মৃত্যুবরণ করতে পারে।

কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউর ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা পেশির স্বাভাবিক অবস্থার অবনতি ঘটে বলে দক্ষতার সঙ্গে হৃৎপিণ্ড কার্যসম্পাদন করতে পারে না এবং রক্ত সঞ্চালনে বিঘ্ন ঘটে।শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত সঞ্চালন না হওয়ায় সেল বা কোষপুঞ্জি পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টিপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। হৃৎপিণ্ড থেকে সুষ্ঠুভাবে রক্ত সঞ্চালন না হওয়ার ফলে বিপরীতধর্মী চাপের কারণে ফুসফুস রক্তাধিক্যের কারণে পীড়িত হয় এবং কোষপুঞ্জিতে ফ্লুইড জমে যায়। এ অবস্থাকে বলা হয় ইডিমা।

 হৃদস্পন্দন নিয়মিত রাখার উদ্দেশে হৃৎপিণ্ডে বৈদ্যুতিক স্পন্দনের উৎপত্তি এবং সঞ্চালনে অসঙ্গতির কারণে অ্যারিদ্মিয়া সৃষ্টি হয়। হৃদস্পন্দনের দীর্ঘস্থায়ী অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে রোগীকে পেসমেকার সংযোজনের পরামর্শ দেয়া হয়।হৃদরোগে মৃত্যুর ৫০ শতাংশ হয়ে থাকে হৎপিণ্ডের শিরা-উপশিরার বিভিন্ন রোগের কারণে। রক্ত প্রবাহের আলোড়ন ও প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টির জন্য শিরার অভ্যন্তর ভাগের কোনো অংশ বিনষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাধারণত ক্ষতিগ্রস্ত অংশের ওপর রক্ত জমাট বেঁধে ক্ষতিগ্রস্ত অংশকে (শিরা সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত) ঢেকে রাখে। বিনষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত অংশ সুস্থ হয়ে গেলে জমাট বাঁধা রক্ত স্বাভাবিকভাবে দ্রবীভূত হয়ে যায়।হৃৎপিণ্ডের শিরা-উপশিরার অভ্যন্তরে ক্ষত বা প্রদাহ হলে রক্তে অবস্থিত প্ল্যাটিলেট, লিপিড বা চর্বি, কোলেস্টেরল ও আঁশজাতীয় পদার্থ শিরার নিচের স্তর ইন্টিমাকে আক্রমণ করে ও পুঞ্জীভূত হয়। এতে শিরার সংকোচন প্রসারণ ক্ষমতা লোপ পায় এবং শিরা সংকীর্ণ বা সরু হয়ে পড়ে। এ অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার কারণে হৃৎপিণ্ডের কোনো কোনো অংশের কোষপুঞ্জিতে রক্ত প্রবাহ কমে যায়।এ অবস্থাকে ইশকিমিয়া বলা হয়। ইশকিমিয়ার কারণে রোগী কোনো কোনো সময় বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করে। একে অ্যানজাইনা বা অ্যানজাইনা পেক্টরিস বলা হয়।

 উপরোক্ত পরিস্থিতির কারণে শিরা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে মাইওকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বলা হয়। রক্ত জমাট বাঁধার কারণে শিরার রক্তপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে তাকে করোনারি থ্রোম্বোসিস বলা হয়।এ অবস্থায় রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় বলে হৃৎপিণ্ডের কোনো কোনো অংশে অক্সিজেন সরবরাহের অভাবে কোষ মরে যায়। তখন জমাটকৃত রক্তপিণ্ড দ্রবীভূত করার জন্য ওষুধ প্রয়োগ বা হৃৎপিণ্ডের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে আবার অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেলুনিং, স্ট্যান্টিং ও বাইপাস সার্জারির প্রয়োজন হয়।

 উচ্চরক্তচাপের ফলে কোনো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের রক্ত ধমনি বা শিরা-উপশিরার ধ্বংসের কারণে মানুষ মৃত্যুবরণ করতে পারে। উচ্চরক্তচাপের কারণে হৃৎপিণ্ড বা কিডনি ফেল করতে পারে। রক্তচাপ সাধারণত দুই ধরনের। সিস্টোলিক ও ডাইস্টোলিক রক্তচাপ।প্রাপ্তবয়স্কদের সিস্টোলিক ও ডাইস্টোলিক রক্তচাপের স্বাভাবিক সীমা হল যথাক্রমে ১১০-১৪০ এবং ৭০-৯০ মিলিমিটার মার্কারি। তবে ব্যক্তি, সময়, বয়স বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রক্তচাপের মাত্রায় তারতম্য হতে পারে। এ সীমারেখা অতিক্রম করলে তাকে উচ্চরক্তচাপ হিসেবে গণ্য করা হয়। উচ্চরক্তচাপের কারণে রক্তের শিরা-উপশিরা বিদীর্ণ বা ফেটে যেতে পারে অথবা হৃৎপিণ্ড ও কিডনি ফেল করে যেতে পারে।উচ্চরক্তচাপের কারণে স্ট্রোকে মৃত্যুর হারও কম নয়।

উচ্চরক্তচাপের মাত্রা বুঝে এবং ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন রোগীর শিরা-উপশিরা বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কোনো ক্ষতি সাধিত হয়েছে কিনা। উচ্চরক্তচাপের অবনতি ঘটানোর পক্ষে কতগুলো সহায়ক কারণ রয়েছে। যেমন- ডায়াবেটিস, অ্যাথেরোমা, রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের বেশি মাত্রা, মনস্তাত্ত্বিক সংকট, রিনল বা বৃক্কজনিত কোনো সমস্যা থাকলে চিকিৎসার জন্য তাও চিকিৎসককে বিবেচনায় নিতে হয়।

অনেকেই স্ট্রোককে হৃদরোগ মনে করে থাকে। আসলে তা নয়। স্ট্রোক মস্তিষ্কের রোগ। স্ট্রোক হলে মস্তিষ্কে হঠাৎ করে রক্তপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।এ প্রতিবন্ধকতার কারণে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মস্তিষ্কের কোনো অংশের কোষ মরে যায়। মস্তিষ্কের শিরা বা উপশিরার কোনো স্থানে রক্তপিণ্ড বা প্লেটিলেট ও ফিব্রিন দ্বারা তৈরি পিণ্ড কর্তৃক রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে উচ্চরক্তচাপের কারণে শিরা বা উপশিরা বিদীর্ণ হয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে। এ অবস্থায় রোগী বেঁচে গেলেও ঠিকভাবে কথা বলতে অসুবিধা হয়, শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, দৃষ্টিশক্তির অবনতি ঘটে, চলাফেরায় অসুবিধা হয় এবং অনুভূতি বিলুপ্ত হয়। হৃদরোগ পৃথিবীর প্রধান ঘাতক রোগ।

 শুধু ওষুধ নয়, হৃদরোগের কারণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কৃত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ এবং মৃত্যুহার কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।হৃদরোগ প্রতিকারে গত ২০ বছরে বিভিন্ন কার্যকর ওষুধ আবিষ্কারে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ইশকিমিয়া ও মাইওকার্ডিয়াল ইনফার্কশান প্রতিকারে অ্যানজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস সার্জারি বিশ্বজুড়ে সাফল্যজনক চিকিৎসা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। রোগ হয়ে গেলে সুস্থতা বা জীবন রক্ষার জন্য আমাদের প্রতিকার খুঁজতে হয়।অধিকাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর হলেও রোগ প্রতিকারের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত চিকিৎসা সব সময় সুফল বয়ে আনে না।

তাই প্রতিকারের চেয়ে রোগ বা রোগের কারণগুলো প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করাই চিকিৎসাশাস্ত্রের মূল লক্ষ্য।তবে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই, রোগ বা রোগের কারণগুলো নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধ করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই সব রোগ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে। কারণ বহু রোগের উৎপত্তি অজানা কারণে হয়ে থাকে।

এবার দেখা যাক, আমাদের লাইফস্টাইল এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে হৃদরোগ ও তার কারণগুলো নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে আমরা কতটুকু সাফল্য অর্জন করতে পারি।
**  উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ ও মৃত্যুর অন্যতম কারণ। আপনি কি জানেন, আপনার রক্তের চাপ স্বাভাবিক আছে কিনা? রক্তচাপ স্বাভাবিক না হলে কত বেশি? এসব তথ্য না জানলে দেরি না করে জেনে নিন এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে সচেষ্ট হোন। লাইফস্টাইল, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও ব্যায়ামের মাধ্যমেও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। প্রাকৃতিক উপায়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ওষুধের ওপর নির্ভরশীলতা কমে যায়।

** আপনি হৃদরোগে ভুগলে ধূমপান পরিহার করুন। ধূমপান রক্তচাপের জন্য ক্ষতিকর। উচ্চরক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে সিগারেটের নিকোটিন রক্তের শিরা বা উপশিরার ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তবে এটা জোর দিয়ে বলা যাবে না যে, শুধু ধূমপান পরিহার করলে রক্তচাপ কমে যাবে বা হৃদরোগ ভালো হয়ে যাবে।

** শরীরের ওজন ঠিক রাখুন। শরীরের মাত্রাতিরিক্ত ওজনের সঙ্গে হৃদরোগ এবং উচ্চরক্তচাপের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আপনি যদি স্থূলকায় হয়ে থাকেন, কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে শরীরের ওজন কমিয়ে আনুন। বাড়তি ওজন কমিয়ে আনার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চরক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসা বাঞ্ছনীয়। শরীরের ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন।চার. জৈব শাকসবজি ও ফলমূল বেশি খাওয়া দরকার। অন্যান্য খাদ্যের মধ্যে থাকতে হবে অর্গানিক ভুসিসমৃদ্ধ শস্য, বাদাম, বিভিন্ন ধরনের শস্যের বিচি ও তেল। খাসি ও গরুর গোশত যত কম খাওয়া যায়, তত ভালো।প্রোটিনের হিসেবে মাছ ও মুরগির গোশত ভালো।

 ট্রান্সফ্যাট হৃদরোগ সৃষ্টির সহায়ক বলে তা বর্জন করুন। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী। কাঁচা লবণ খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে। অর্গানিক ডিম, দুধ ও দই স্বাস্থ্যকর খাবার। ভিটামিন সি, বিটা কেরোটিন, ভিটামিন ই, সেলেনিয়াম এবং পলিফেনোল শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এসব অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের উৎকৃষ্ট উৎস ফলমূল, শাকসবজি ও সবুজ চা।

** জাঙ্কফুডের পরিহার করুন।এসব খাবারে প্রচুর লবণ চিনি, মনোসোডিয়াম গ্লুটামেটও টাট্টাজিনজাতীয় বিতর্কিত খাদ্যোপকরণ থাকে। জাঙ্কফুডে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ ও আঁশ কম থাকে। জাঙ্কফুডে প্রচুর চিনি ও চর্বি থাকে বলে এসব খাবার খেলে ওজন বেড়ে যাওয়াসহ উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ ক্যান্সারের মতো বহু জটিল প্রাণঘাতী রোগের উৎপত্তি হয়।

** সুস্থ জীবনের জন্য ব্যায়ামের বিকল্প নেই। হাঁটা হল সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম। বাইরে খোলামেলা জায়গায়, নদীর পাড়ে, গাছপালা ঘেরা পার্ক বা ময়দানে হাঁটলে শরীর-মন দুটিই চাঙ্গা হবে। দূষণমুক্ত বাতাস ও সূর্যের আলোয় হাঁটার চেষ্টা করুন। হাঁটার সময় সঙ্গী-সাথী নিয়ে আলাপ-আলোচনা, খোশগল্প, হাস্যরস, কৌতুক এবং আনন্দ-উল্লাসে অংশ নিন। এতে সারাদিনের শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি, অবসাদ ও দুশ্চিন্তা দূর হবে। ব্যায়াম করলে রাতে ভালো ঘুম হয়। আর ঘুম সুস্বাস্থ্যের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। হাঁটা ছাড়াও সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা অথবা জিমনেশিয়ামে ব্যায়াম করা যেতে পারে। কোন ব্যায়াম কার জন্য কতটুকু উপযোগী, তা চিকিৎসক পরামর্শ দিতে পারেন।

** ছয়. দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করুন। স্ট্রোক ও হৃদরোগ নিয়ে খাটাখাটি করবেন তবে সীমা অতিক্রম করবেন না।

** পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং রাতের ঘুম যেন নিরুপদ্রব হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। রাতে ভালো ঘুম না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ঘুমের ওষুধ খাবেন। কঠোর ব্যায়াম এবং ঘুমে দুঃস্বপ্ন দেখার কারণে উত্তেজনা বৃদ্ধির ফলে অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসৃত অ্যাড্রেনালিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক দ্রব্যের প্রভাবে হৃদস্পন্দন অত্যন্ত বেড়ে যায়।হৃদরোগ বিশেষ করে উচ্চরক্তচাপের ক্ষেত্রে এ মাত্রাতিরিক্ত হৃদস্পন্দন তথা অতিমাত্রায় রক্তপ্রবাহের ফলে স্ট্রোক বা হার্টফেল করে রোগী তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যুবরণ করতে পারে।

** মনে রাখবেন, ব্যায়াম, জ্বর, উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, চা, কফি বা অ্যালকোহল পানে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। কোনো কোনো ওষুধ সেবনেও হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। হৃদরোগ হলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি এর প্রতিকারে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক যথাযথ সর্বোৎকৃষ্ট চিকিৎসা গ্রহণ বাঞ্ছনীয়। স্ট্রোক ও হৃদরোগ কোনোটিই একক রোগ নয়। অনেক জটিল কারণে এসবের উৎপত্তি।চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্রমোন্নতি ও বিকাশের ফলে রোগ নির্ণয় ও এর প্রতিকার এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। তারপরও স্ট্রোক ও হৃদরোগীদের সব সময় নিয়মতান্ত্রিক এবং সতর্কতামূলক জীবনযাপন বাঞ্ছনীয়।

** চিকিৎসাবিজ্ঞানে উচ্চরক্তচাপকে সাইলেন্ট কিলার হিসেবে গণ্য করা হয়। ৪০ বয়সোর্ধ্ব সব মানুষের হৃদরোগ সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত।মধ্যবয়সী বা বয়স্কদের নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মস্তিষ্ক ও হার্টের অবস্থা এবং কার্যক্রম, রক্তচাপ, স্ট্রোক ও হৃদরোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্য প্যারামিটারগুলো স্বাভাবিক আছে কিনা, তা জেনে নেয়া উচিত। সময় থাকতেই আপনার হৃদরোগ আছে কিনা, থাকলে কোন পর্যায়ে, তা জানা এবং তার সঠিক চিকিৎসার জন্য অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।চিকিৎসকের পরামর্শ হুবহু মেনে চলুন এবং দুশ্চিন্তামুক্ত নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করুন। দেখবেন, স্ট্রোক ও হৃদরোগ নিয়েও আপনার জীবন অনেক সহজ ও সুন্দর হবে।

অনিয়মিত মিলনে ওভারিয়ান সিস্ট


কীভাবে সিস্ট মোকামেলা করা যায়।


ওভারিয়ান সিস্ট মেয়েদের সবচেয়ে বড় শারীরিক সমস্যা। সিস্ট হল পানিভর্তি ছোট থলি। একাধিক সিস্টকে একত্রে পলিসিস্ট বলা হয়। ওভারি বা ডিম্বাশয় ফিমেল রিপ্রোডাক্টিভ অঙ্গগুলোর মধ্যে অন্যতম। ছোট ছোট সিস্ট পুঁতির মালার মতো ওভারি বা ডিম্বাশয়কে ঘিরে রাখে। এই সিস্টের জন্য ওভারির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।


কীভাবে সিস্ট মোকামেলা করা যায়

চিকিৎসকের মতে, অনিয়মিত সেক্স লাইফ, হরমোনের সমস্যা, পিরিয়ড, অল্পবয়সে ঋতুস্রাব হওয়ার কারণে সিস্টের সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন নারীরা।এছাড়া বয়ঃসন্ধিকালে এ সমস্যা শুরু হলেও, দেরিতে বিয়ে, দেরিতে সন্তান নেয়ার কারণে এ সমস্যা দেখা দেয়।ওভারিয়ান সিস্ট নারীর একটি বড় সমস্যা, তবে প্রাথমিক পর্যয়ে এ সমস্যা সমাধান সম্ভব। তাহলে দেরি কেন? আসুন জেনে নেয়া যাক কীভাবে সিস্ট মোকামেলা করা যায়।

*  ডায়েট অস্বাস্থ্যকর ডায়েট ও অনিয়মিত লাইফস্টাইল ওভারিয়ান সিস্টের অন্যতম কারণ। ডায়েটে ফল, সবুজ শাক-সবজি, গোটা শস্য জাতীয় খাবার রাখলে সিস্ট নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে মনে করেন গবেষকরা।

*  হার্বাল উপায় :বেশ কিছু হার্বাল জিনিস এন্ডোক্রিন সিস্টেম সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। হরমোনের সঠিক মাত্রা বজায় রাখা, ওভিউলেশন নিয়মিত করতে ও জনন তন্ত্রে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। ড্যান্ডেলিয়ন, মিল্ক থিসল ইস্ট্রজেনের সঠিক মাত্রায় সিস্ট নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রয়েছে।

* ওজন নিয়ন্ত্রণ :অতিরিক্ত ওজন ও বিএমআই বেশি হওয়ার কারণেও ওভারিয়ান সিস্টে আক্রান্ত হচ্ছেন নারীরা। মেদ ঝরিয়ে বিএমআফ ২৫ এর নীচে নিয়ে আসতে পারলে ওভারিয়ান সিস্টের সমস্যা অনেকটাই কাটানো যেতে পারে।

* এছাড়া কিছু ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট হরমোনের ব্যালান্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন ই, ফ্লাক্সসিড অয়েল, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি তার মধ্যে অন্যতম।